About Assam State in Bengali
বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বিভিন্ন নানান প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ ভারতের একটি অন্যতম রাজ্য, বিশেষ করে যার চা পুরো পৃথিবী জুড়ে বিখ্যাত এবং যাকে উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রবেশদ্বার বলা হয়। ভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির মধ্যে একটি চলুন বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক ভারতের রাজ্য আসাম সম্পর্কে –
আসাম রাজ্য
Assam State, India
অবস্থান
ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে অবস্থিত ভারতের একটি অঙ্গরাজ্য হল আসাম। যার উত্তর সীমান্তে রয়েছে ভুটান রাষ্ট্র এবং ভারতের অরুণাচল প্রদেশ রাজ্য, দক্ষিণ সীমান্তে রয়েছে ভারতের মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম রাজ্য এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্র, পূর্ব সীমান্তে রয়েছে ভারতের মণিপুর ও নাগাল্যান্ড রাজ্য এবং পশ্চিম সীমান্তে রয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য।
মানচিত্র
Map of Assam State
![]() | ![]() |
আসাম রাজ্যের মানচিত্র (Map of Assam State with districts) | ভারতের মানচিত্রে আসাম রাজ্যের অবস্থান (Assam state in Map of India) |
আয়তন
ভারতের সেভেন সিস্টার্স রাজ্যগুলির মধ্যে অন্যতম, আসামের মোট আয়তন ৭৮,৪৩৮ বর্গ কিলোমিটার, যা আয়তনে ভারতের রাজ্যগুলির মধ্যে ১৬তম রাজ্য।
জনসংখ্যা
আসামের মোট জনসংখ্যা ৩,১২,০৫,৫৭৬ জন, যা জনসংখ্যার বিচারে ভারতের রাজ্যগুলির মধ্যে ১৫তম রাজ্য। রাজ্যের জনঘনত্ব অর্থাৎ প্রতি বর্গ কিলোমিটারে এই রাজ্যে ৩৯৮ জন মানুষ বসবাস করে। তবে আসাম রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ৮৬% মানুষ গ্রামে এবং বাকি ১৪% মানুষ শহরে বসবাস করে। এই রাজ্যে প্রতি ১০০০ জন পুরুষে মহিলার সংখ্যা ৯৫৮ জন।
২০১১ সালের আদমশুমারির বিবরণ অনুসারে, আসাম রাজ্যের জনসংখ্যার তথ্য –
Population data of Assam state 2011
প্রকৃত জনসংখ্যা | ৩১,২০৫,৫৭৬ জন |
পুরুষ | ১৫,৯৩৯,৪৪৩ জন |
মহিলা | ১৫,২৬৬,১৩৩ জন |
জনসংখ্যা বৃদ্ধি | ১৭.০৭% |
মোট জনসংখ্যার শতাংশ | ২.৫৮% |
লিঙ্গ অনুপাত | ৯৫৮ |
শিশু লিঙ্গ অনুপাত | ৯৬২ |
ঘনত্ব/বর্গ কিমি | ৩৯৮ |
এলাকা (বর্গ কিমি) | ৭৮,৪৩৮ |
মোট শিশু জনসংখ্যা (০-৬ বয়স) | ৪,৬৩৮,১৩০ জন |
সাক্ষরতা | ৭২.১৯% |
পুরুষ সাক্ষরতা | ৭৭.৮৫% |
মহিলা সাক্ষরতা | ৬৬.২৭% |
নামকরণ
আসাম রাজ্যটির নামকরণে নানা মতামত রয়েছে। তবে সাধারণত বিশ্বাস করা হয় যে, পর্বতবাহুল্যবশত ভূমি অসমতল হওয়ায় রাজ্যটি ‘অসম’ বা ‘আসাম’ নামে অভিহিত। অপর একটি মতে, অসম প্রতাপবিশিষ্ট আহোম জাতি কর্তৃক একসময় রাজ্যটি অধিকৃত হওয়ায় রাজ্যটির নাম ‘অসম’ বা ‘আসাম হয়েছে বলে মনে করা হয়।
ইতিহাস
প্রাচীনকালে আসাম রাজ্যটি কামরূপ নামে পরিচিত ছিল। সেসময় বর্মন, শালস্তম্ভ এবং কামরূপ পাল শক্তিশালী রাজবংশ দ্বারা রাজ্যটি শাসিত হয়েছিল। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে এই অঞ্চলটি ব্রিটিশদের দখলে চলে যায়।
এরপর, ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতার পর আসাম রাজ্যের পুনর্গঠন হয় এবং আসাম স্বাধীন ভারতের একটি রাজ্যে পরিণত হয়। তবে ১৯৪৭ সাল থেকে বর্তমান কালের মধ্যবর্তী সময়ে আসাম রাজ্যটির বিভিন্ন অংশ সংযোজন ও বিয়োজন হয়েছে।
প্রশাসনিক বিভাগ
রাজধানী : বর্তমানে আসাম রাজ্যের রাজধানী হল দিসপুর।
জেলা : আসাম রাজ্যটিতে সর্বমোট ৩৫টি প্রশাসনিক জেলা রয়েছে। এগুলি হল –
District list of Assam state
জেলা | সদর দপ্তর | জনসংখ্যা (২০১১ জনগণনা) | আয়তন (বর্গ কিমি) |
বাক্সা জেলা | মুছলপুর | ৯৫০,০৭৫ | ২,৪৫৭ |
বজালী জেলা | পাঠশালা | ২৫৩,৮১৬ | ৪১৮ |
বরপেটা জেলা | বরপেটা | ১,৬৯৩,৬২২ | ৩,১৮২ |
বিশ্বনাথ জেলা | বিশ্বনাথ চারিআলি | ৬১২,৪৯১ | ১,৪১৫ |
বঙাইগাঁও জেলা | বঙাইগাঁও | ৭৩৮,৮০৪ | ১,০৯৩ |
কাছাড় জেলা | শিলচর | ১,৭৩৬,৩১৯ | ৩,৭৮৬ |
চরাইদেউ জেলা | সোণারি | ৪৭১,৪১৮ | ১,০৬৯ |
চিরাং জেলা | কাজলগাঁও | ৪৮২,১৬২ | ১,১৭০ |
দরং জেলা | মঙ্গলদৈ | ৯২৮,৫০০ | ১,৫৮৫ |
ধেমাজি জেলা | ধেমাজি | ৬৮৬,১৩৩ | ৩,২৩৭ |
ধুবড়ী জেলা | ধুবড়ী | ১,৩৯৪,১৪৪ | ১,৬০৮ |
ডিব্রুগড় জেলা | ডিব্রুগড় | ১,৩২৬,৩৩৫ | ৩,৩৮১ |
ডিমা হাছাও জেলা | হাফলং | ২১৪,১০২ | ৪,৮৯০ |
গোয়ালপাড়া জেলা | গোয়ালপাড়া | ১,০০৮,১৮৩ | ১,৮২৪ |
গোলাঘাট জেলা | গোলাঘাট | ১,০৬৬,৮৮৮ | ৩,৫০২ |
হাইলাকান্দি জেলা | হাইলাকান্দি | ৬৫৯,২৯৬ | ১,৩২৭ |
হোজাই জেলা | শঙ্করদেবনগর | ৯৩১,২১৮ | ১,৬৮৬ |
যোরহাট জেলা | যোরহাট | ৯২৪,৯৫২ | ২,৮৫১ |
কামরূপ মহানগর জেলা | গুয়াহাটী | ১,২৫৩,৯৩৮ | ১,৫২৮ |
কামরূপ জেলা | রঙ্গিয়া | ১,৫১৭,৫৪২ | ৩,১০৫ |
কার্বি আংলং জেলা | ডিফু | ৬৬০,৯৫৫ | ৭,৩৬৬ |
করিমগঞ্জ জেলা | করিমগঞ্জ | ১,২২৮,৬৮৬ | ১,৮০৯ |
কোকরাঝাড় জেলা | কোকরাঝাড় | ৮৮৭,১৪২ | ৩,১৬৯ |
লখিমপুর জেলা | উত্তর লখিমপুর | ১,০৪২,১৩৭ | ২,২৭৭ |
মাজুলী জেলা | গড়মূর | ১৬৭,৩০৪ | ৮৮০ |
মরিগাঁও জেলা | মরিগাঁও | ৯৫৭,৪২৩ | ১,৭০৪ |
নগাঁও জেলা | নগাঁও | ২,৮২৩,৭৬৮ | ৩,৯৭৩ |
নলবাড়ী জেলা | নলবাড়ী | ৭৭১,৬৩৯ | ২,২৫৭ |
শিবসাগর জেলা | শিবসাগর | ৬৭৯,৬৩২ | ২,৬৬৮ |
শোণিতপুর জেলা | তেজপুর | ১,৯২৪,১১০ | ৩,১৭৬ |
দক্ষিণ শালমারা-মানকাচর জেলা | হাটশিঙিমারি | ৫৫৫,১১৪ | ৫৬৮ |
তামোলপুর জেলা | তামোলপুর | ৩৮৯,১৫০ | ৮৮৪ |
তিনসুকীয়া জেলা | তিনসুকীয়া | ১,৩২৭,৯২৯ | ৩,৭৯০ |
ওদালগুরি জেলা | ওদালগুরি | ৮৩১,৬৮৮ | ১,৮৫২ |
পশ্চিম কার্বি আংলং জেলা | হামরেণ | ২৯৫,৩৫৮ | ৩,০৩৫ |
সরকার ও রাজনীতি
আসাম বিধানসভা নামে পরিচিত আসাম রাজ্যের আইনসভা ১২৬ জন সদস্য নিয়ে গঠিত এককক্ষবিশিষ্ট। এছাড়াও এইরাজ্যে ভারতের আইনসভার উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় ৭টি আসন এবং নিম্নকক্ষ লোকসভায় ১৪টি আসন রয়েছে। বিচার ব্যবস্থার দিক থেকে আসাম রাজ্যটি গুয়াহাটি হাইকোর্ট দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
শহর
গুয়াহাটি শহর হল আসাম রাজ্যের বৃহত্তম শহর। এছাড়াও অন্যান্য প্রধান শহরগুলি হল – বঙাইগাঁও (Bongaigaon), ডিব্রুগড় (Dibrugarh), শিলচর (Silchar), তেজপুর (Tezpur), নগাঁও (Nagaon), তিনসুকিয়া (Tinsukia), দিসপুর (Dispur) ইত্যাদি।
রাজ্য প্রতীক
আসাম রাজ্যের রাজ্য প্রতীকগুলি হল –
State Symbols of Assam state
রাজ্যের সিলমোহর | আসামের প্রতীক | ![]() |
রাজ্যের নীতিবাক্য | জয় আই অসম (Hail Mother Assam) | |
রাজ্য সংগীত | অ মোৰ আপোনাৰ দেশ O Mur Apunar Desh (O My Endearing Country!) | |
রাজ্য পশু | ভারতীয় গন্ডার (Indian Rhinoceros) | ![]() |
রাজ্য পাখি | বাদি হাঁস বা সাদা ডানাওয়ালা হাঁস (White-winged Duck) | ![]() |
রাজ্য গাছ | হলং (Hollong) | ![]() |
রাজ্য ফুল | কপৌ ফুল বা শেয়াললেজী অর্কিড (Foxtail Orchids) | ![]() |
রাজ্য ফল | কাজি নেমু (Kaji Nemu) | ![]() |
রাজ্য উৎসব | বিহু (Bihu) | ![]() |
ভূপ্রকৃতি
নীল পাহাড়, সবুজ উপত্যকা এবং বিশাল নদী দ্বারা সমৃদ্ধ আসামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য সত্যিই অতুলনীয়। আসামের ভৌগলিক অঞ্চলকে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়, যথাক্রমে – রাজ্যের উত্তর অংশ জুড়ে রয়েছে ব্রহ্মপুত্র সমভূমি, দক্ষিণ অংশ জুড়ে রয়েছে বরাক সমভূমি এবং এই দুই সমভূমির মাঝখানের উচ্চভূমি অংশ জুড়ে রয়েছে উত্তর কাছাড়ের পার্বত্যভূমি।
নদনদী ও হ্রদ
রাজ্যের প্রায় পূর্ব থেকে পশ্চিম অংশে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র নদীটি হল আসাম রাজ্যের প্রধান নদী, যা ধুবড়ির কাছে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তাছাড়া এই নদীটি বিভিন্ন শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত হয়ে এই রাজ্যে নদীমাতৃক নানান দ্বীপ তৈরি করেছে। এই দ্বীপগুলির মধ্যে ১২৯ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট মাজুলি দ্বীপ হল বিশ্বের বৃহত্তম নদীমাতৃক দ্বীপ।
এছাড়াও সম্পূর্ণ আসাম রাজ্য জুড়ে ব্রহ্মপুত্র নদীর ৩৫টি প্রধান উপনদী রয়েছে। রাজ্যের দক্ষিণে প্রবাহিত বরাক নদী হল এই রাজ্যের আর একটি উল্লেখযোগ্য নদী।
প্রাকৃতিক সমস্যা
ভূমিকম্প এবং বন্যা আসাম রাজ্যের দুটি প্রধান প্রাকৃতিক সমস্যা। প্রতিবছর বন্যার কবলে পড়ে এই রাজ্যটির নানান ক্ষয়-ক্ষতি হয়ে থাকে। এছাড়াও শিলাস্তরের অস্থিতিশীলতার কারণে এই রাজ্যে ভূমিকম্পের সম্ভাবনাও বেশি।
জলবায়ু
গ্রীষ্মমন্ডলীয় মৌসুমী জলবায়ুর অন্তর্গত আসামের জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ প্রকৃতির। ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় এই রাজ্যের তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে কম। এই রাজ্যের গ্রীষ্মকালীন সর্বাধিক তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড এবং শীতকালীন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড এর মধ্যে হয়ে থাকে।
গ্রীষ্মকালে প্রায়শই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির ফলে এই রাজ্যে যেমন গ্রীষ্মের তাপ অনুভব করা যায় না, তেমনি শীতকালেও এই রাজ্যে শীতের তেমন তীব্রতা নেই। তবে এই রাজ্যের জলবায়ুতে জলীয়বাষ্পের পরিমান অর্থাৎ আপেক্ষিক আর্দ্রতা সারা বছরই বেশি থাকে। এই রাজ্যের বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমান ২০০০ মিলিমিটার।
উদ্ভিদ ও প্রাণীজগত
আসাম রাজ্যটি বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য অঞ্চল এবং গ্রীষ্মমন্ডলীয় রেইনফরেস্ট, পর্ণমোচী বন, নদীর তৃণভূমি, বাঁশের বাগান ও অসংখ্য জলাভূমি ইকোসিস্টেম নিয়ে গঠিত। এই রাজ্যের পাহাড় ও বনাঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে মূল্যবান প্রজাতির উদ্ভিদ এবং বিভিন্ন ধরনের ঔষধি উদ্ভিদও পাওয়া যায়। এছাড়াও রাজ্যটিতে ৫০০টিরও বেশি প্রজাতির অর্কিড রয়েছে।
আসাম রাজ্যটিতে সর্বমোট ২২টি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এবং ৭টি জাতীয় উদ্যান রয়েছে। এর মধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে অবস্থিত কাজিরাঙ্গা জাতীয় উদ্যান এবং ভুটানের সীমান্তের কাছে অবস্থিত মানস বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হল ইউনেস্কো কর্তৃক দুটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান।
বৈচিত্র্যময় প্রাণীজগতে সমৃদ্ধ আসাম রাজ্যের প্রধান বন্যপ্রাণীগুলি হল ভারতীয় এক শিংওয়ালা গন্ডার, এশীয় হাতি, বেঙ্গল টাইগার, মেঘলা চিতা, চিতল হরিণ, সোনালী বানর ইত্যাদি। এছাড়াও বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বুনো মহিষ আসাম রাজ্যটির মধ্যেই রয়েছে।
আসাম রাজ্যটিতে প্রায় ৮২০টি প্রজাতির পাখির বৈচিত্র্যও রয়েছে। এই রাজ্যের প্রধান পাখির মধ্যে রয়েছে বড় বসন্ত বৌরি, বাদি হাঁস, রাজধনেশ ইত্যাদি।
অর্থনীতি
আসাম রাজ্যের অর্থনীতি মুলত কৃষি, শিল্প এবং প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নির্ভরশীল।
কৃষি
আসাম ভারতের একটি কৃষিপ্রধান রাজ্য। ফলে এই রাজ্যের বেশিরভাগ মানুষই কৃষিকাজের মাধ্যমে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। উৎপাদিত ফসলগুলির মধ্যে এই রাজ্যের প্রধান ফসলগুলি হল ধান, গম, ডাল, সরিষা ও অন্যান্য তৈলবীজ। এছাড়াও চা, পাট এবং আখের মতো অর্থকরী ফসলও বিশাল পরিমাণে চাষ হয়ে থাকে।
ভারতের অর্ধেকেরও বেশি চা উৎপাদন হয় ভারতের এই আসাম রাজ্যে এবং রাজ্যটির প্রায় ৬৫% কৃষি জমি চা চাষের আওতায় রয়েছে। বিশ্ব দরবারে আসাম রাজ্যটির সবচেয়ে বড়ো অবদান হল এই আসাম চা।
শিল্প
আসামের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায়, বিশেষ করে কৃষিভিত্তিক শিল্প এবং খনিজ তেলের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। গুয়াহাটি এবং ডিব্রুগড় হল আসামের প্রধান শিল্প কেন্দ্র। চা শিল্পের পাশাপাশি এই রাজ্যের বস্ত্রশিল্প যথেষ্ট উন্নত। এছাড়াও তাঁত ও হস্তশিল্প হল এরাজ্যের ঐতিহ্যবাহী শিল্প।
প্রাকৃতিক সম্পদ
প্রাকৃতিক সম্পদ হিসাবে আসাম রাজ্যে খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং কয়লার বিশাল মজুদ রয়েছে। ভারতের সর্বাধিক খনিজ তেল এই রাজ্য থেকেই পাওয়া যায়। তাছাড়া এই রাজ্য হল ভারতে অপরিশোধিত তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের একটি প্রধান উৎপাদক। আসাম হল বিশ্বের দ্বিতীয় স্থান যেখানে পেট্রোলিয়াম আবিষ্কৃত হয়েছিল।
জাতিগোষ্ঠী
আসাম রাজ্যের অধিবাসিরা মূলত অসমিয়া নামে পরিচিত। রাজ্যটিতে প্রচুর সংখ্যক উপজাতি রয়েছে এবং প্রত্যেক উপজাতিই তার ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, পোশাক এবং জীবনযাত্রার বহিরাগত পদ্ধতিতে অনন্য। এই রাজ্যে বসবাসকারি বিভিন্ন উপজাতিগুলি হল বোড়ো, কাচারি, কার্বি, মিরি, মিশিমি, রাভা ইত্যাদি।
ভাষা
অসমীয়া এবং বোড়ো ভাষা হল আসাম রাজ্যের সরকারী ভাষা, তবে এই রাজ্যের বরাক উপত্যকার তিনটি জেলায় বাংলা ভাষা হল সরকারী ভাষা। এই রাজ্যের কথিত প্রধান ভাষাগুলি হল অসমীয়া, বাংলা, বোড়ো, হিন্দি, সাদরি, মিশিং, নেপালি ইত্যাদি।
ধর্ম
ধর্মগত দিক থেকে আসাম রাজ্যে বসবাসকারী জনসংখ্যার ৬১.৪৭% মানুষ হিন্দু ধর্মাবলম্বী, ৩৪.২২% মানুষ ইসলাম ধর্মাবলম্বী, ৩.৭৪% মানুষ খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী এবং ০.৪১% মানুষ অন্যান্য ধর্মাবলম্বী।
শিক্ষাব্যবস্থা
শিক্ষাগত দিক থেকে আসাম রাজ্যের সাক্ষরতার হার ৭২.১৯ শতাংশ।
সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য
আসাম রাজ্যটি বিভিন্ন নানান সংস্কৃতির মিলনস্থল। প্রতীকবাদ আসামের একটি প্রাচীন সাংস্কৃতিক অনুশীলন এবং এখনও এটি অসমীয়া জীবনধারার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অসমীয়া সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিকী উপাদান হিসাবে রয়েছে অসমীয়া গামোছা, তামুলপান বা গুয়াপান, শরাই এবং জাপি; যা মূলত বিশ্বাস, অনুভূতি, গর্ব, পরিচয় ইত্যাদির প্রতিনিধিত্ব হিসাবে ব্যবহৃত হয়। যেমন, ভক্তি, শ্রদ্ধা এবং বন্ধুত্বের প্রস্তাব হিসাবে গামোছা এর সাথে তামুলপান বা গুয়াপান প্রদান ইত্যাদি।
ঐতিহ্যবাহী পোশাক
মহিলাদের দ্বারা পরিধান করা মেখলা চাদর হল এই রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী পোশাক এবং অসমীয়া গহনাগুলিও অসমীয়া সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।
লোকনৃত্য
বিহু নৃত্য হল আসামের সবচেয়ে জনপ্রিয় লোকনৃত্য এবং এই নৃত্যের সময় নৃত্যশিল্পীরা ঐতিহ্যবাহী রঙীন অসমীয়া পোশাক পরে থাকেন। এছাড়াও সত্রীয়া নৃত্য, বারপেটার ভোরতাল নৃত্য, বাগুরুম্বা নৃত্য, ঝুমুর নৃত্য ইত্যাদি হল আসাম রাজ্যের অন্যান্য প্রধান লোকনৃত্য।
উৎসব
আসাম রাজ্যের রাজ্য উৎসব হল বিহু উৎসব, যা জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সমস্ত অসমিয়াদের দ্বারা মহান আড়ম্বর এবং জাকজমকের সাথে বছরে তিনটি ভাগে উদযাপিত হয়।
রন্ধনপ্রণালী
খাবারের দিক থেকে এই রাজ্যের রন্ধনপ্রণালী এই রাজ্যের সংস্কৃতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সধারনত একটি অসমীয়া খাবার থালিতে পাওয়া যায় ভাত, ডাল, একটি মিশ্র সবজি যাকে লাবরা বলা হয়, বিভিন্ন রকমের ভাঁজা, শাক, চাটনি ইত্যাদি। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ঐতিহ্যবাহী খাবার, যেমন পিঠা, লার, জলপান, পায়েস ইত্যাদি।
গ্রীষ্মের মৌসুমে আসামের একটি প্রিয় খাবার হল পইতা ভাত বা পান্তা ভাত। রান্না করা চাল সারারাত জলে ভিজিয়ে রেখে সকালে এটি সরিষার তেল, পেঁয়াজ, মরিচ, আচার ইত্যাদি দিয়ে পরিবেশন করা হয়। তবে একটি অসমীয়া খাবার সাধারনত তামুল পান বা সুপারি পান চিবিয়ে সমাপ্ত করা হয়।
পরিবহন ব্যবস্থা
পরিবহন মাধ্যম হিসাবে আসাম রাজ্যের সড়কপথগুলি যথেষ্ট উন্নত। এছাড়াও এই রাজ্যে রেলপথ ও আকাশপথের সুবিধাও রয়েছে। গুয়াহাটি রেলওয়ে স্টেশন, কামাক্ষ্যা জংশন রেলওয়ে স্টেশন, ডিব্রুগড় রেলওয়ে স্টেশন, শিলচর বেলওয়ে স্টেশন ইত্যাদি হল এরাজ্যের কয়েকটি প্রধান রেলওয়ে স্টেশন।
আকাশপথ হিসাবে আসাম রাজ্যের প্রধান বিমানবন্দরটি হল লোকপ্রিয় গোপীনাথ বরদলৈ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, যা গুয়াহাটিতে অবস্থিত। এছাড়াও ডিব্রুগড় বিমানবন্দর, তেজপুর বিমানবন্দর এবং শিলচর বিমানবন্দর এই রাজ্যের অন্যান্য প্রধান বিমানবন্দর।
পর্যটন
আসাম রাজ্যের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য, ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এই রাজ্যের পর্যটন শিল্পকে সমৃদ্ধ করে তুলেছে। এই রাজ্যের কয়েকটি বিখ্যাত গন্তব্য স্থান হল –
কামাখ্যা মন্দির
আসাম রাজ্যের রাজধানী শহর গুয়াহাটির নীলাচল পাহাড়ে অবস্থিত কামাখ্যা মন্দিরটি ভারতের অন্যতম বিখ্যাত শক্তি মন্দির। এই মন্দিরটিকে পৃথিবীর ৫১টি শক্তিপীঠের মধ্যে সবচেয়ে পবিত্র এবং প্রাচীনতম বলে মনে করা হয়। এছাড়াও এই মন্দিরটি তার বার্ষিক অম্বুবাচী উৎসবের জন্যও বিখ্যাত।
কাজিরাঙ্গা জাতীয় উদ্যান
আসামের গোলাঘাট ও নগাঁও জেলা জুড়ে অবস্থিত কাজিরাঙ্গা জাতীয় উদ্যান মহান ভারতীয় এক শিংওয়ালা গন্ডারের জন্য বিখ্যাত। এই জাতীয় উদ্যানটি ১৯৮৫ সালে প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য ইউনেস্কো কর্তৃক একটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা পায়।
মানস জাতীয় উদ্যান
আসামের ভুটান-হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত মানস জাতীয় উদ্যান বিশ্বের অন্যতম সুন্দর এবং অক্ষত বন্যপ্রাণীর আবাসস্থলের জন্য বিখ্যাত।
মাজুলি দ্বীপ
আসামের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ২১ বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে বিস্তৃত্ব মাজুলি দ্বীপটি হল পৃথিবীর বৃহত্তম নদী দ্বীপ। চারপাশের সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য, গ্রামীণ জীবনের শান্তিপূর্ণ প্রকৃতি এবং উদ্ভিদ ও প্রাণীর সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যসহ এই দ্বীপ একটি জাদুকরী যাত্রায় স্বাগত জানায়।
এছাড়াও এই রাজ্যের অন্যান্য বিখ্যাত গন্তব্য স্থানগুলি হল –
- উমানন্দ মন্দির ও দ্বীপ,
- আসাম স্টেট মিউজিয়াম,
- কাকোচং জলপ্রপাত,
- আসাম রাজ্য চিড়িয়াখানা ও বোটানিক্যাল গার্ডেন,
- হাফলং লেক,
- শিবসাগর ইত্যাদি।
ভিডিও
আসাম (ASSAM) – ভারতের আসাম রাজ্যের সংক্ষিপ্ত পরিচয় | Explanation of Assam State in Bengali
আরো ভিডিও দেখুন
(Explanation of Assam State in Bengali)